আমাদের মন ও শরীরকে সুস্থ স্বাভাবিক রাখতে যোগাসনের গুরুত্ব অপরিসীম। যোগশাস্ত্রে বর্ণিত আসন গুলোর মধ্যে গোমুখাসন এর উপকারিতা সবথেকে বেশি মনে করা হয়। এই আসনটি অনুশীলনের সময় শরীর গরুর মুখের মত দেখা যায় বলে এই আসনকে গোমুখাসন বলা হয়।
গোমুখাসন নামটি এসেছে সংস্কৃত থেকে এসেছে গৌ গো অর্থ "গরু", মুখের অর্থ "মুখ" বা "মুখ", এবং আসন অর্থ "ভঙ্গি" । আড়াআড়ি পা দেখতে গরুর মুখের মতো, আর বাঁকানো কনুইগুলোকে গরুর কানের মতো দেখায়।
গোমুখাসন হল তিনটি শব্দের সংমিশ্রণ অর্থাৎ গো-মুখ-আসন যেখানে "গো" বলতে গরুকে বোঝায়, "মুখ" বলতে মুখ বোঝায় এবং "আসন" বলতে ভঙ্গি বোঝায়। ভাঁজ করা পাগুলি গরুর মুখের আকৃতি তৈরি করে যখন কনুইগুলি গরুর কানের মতো। অতএব, এটি সাধারণত গরু-মুখের ভঙ্গি হিসাবে উল্লেখ করা হয়।
গোমুখাসন এর উপকারিতা:
ডিপ্রেশন ও দুশ্চিন্তা আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ অংশ হয়ে দাঁড়িয়ে। এই হতাশা, ডিপ্রেশন ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির জন্য গোমুখাসন অনুশীলন করা অনেক উপকারী। গোমুখাসন নিয়মিত অনুষ্ঠানের ফলে সকল প্রকার দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
যাদের মেরুদন্ড বাঁকা বা মেরুদন্ডে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য এই আসনটি মহাঔষধ। নিয়মিত গোমুখাসন অনুশীলনের ফলে বাঁকা মেরুদন্ড সোজা ও সরল। তাছাড়া মেরুদণ্ড সুস্থ রাখতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
মেয়েদের জন্য আসনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোন মেয়ে যদি নিয়মিত এই আসন অনুশীলন করে তবে সে স্ত্রীব্যাধির আক্রমণ থেকে মুক্তি পেতে পারে।
এছাড়া নিয়মিত এই আসনটি অভ্যাস করলে অর্শ, মূত্রপ্রদাহ, বাত বা সায়টিকা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। হজম শক্তি বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও এই আসনটি অনেক কার্যকরী।
ডায়াবেটিস রোগীরা এই আসনটি অভ্যাস করতে পারেন। নিয়মিত অভ্যাসের করলে শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা কমে এবং ইনসুলিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায় যার কারনে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
এই আসনটি মেরুদণ্ডকে লম্বা করতে সাহায্য করতে পারে কারণ পুরো শরীর প্রসারিত হয় যাতে মেরুদণ্ডের গোড়া থেকে মাথা পর্যন্ত অক্সিজেনের ভালো প্রবাহ হয়। গোমুখাসনে স্ট্রেচিং পুরো পেটের অঞ্চলকে কমিয়ে দেয় যা কিডনি, লিভার এবং প্যানক্রিয়াসকে ম্যাসেজ করে।
গোমুখাসনের সতর্কতা:
গোমুখাসন করার সময় বেশ কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। তাদের মধ্যে কিছু হল:
১) যাদের নিতম্ব, বাহু এবং কাঁধে আঘাত রয়েছে তাদের গরুর মুখ যোগা করা এড়িয়ে চলা উচিত।
২) হাঁটুর আঘাতের ক্ষেত্রে এই আসনটি এড়িয়ে চলুন বা পা সোজা করে বা সুখাসনের মতো পা ক্রস করে ভঙ্গি পরিবর্তন করুন।
৩) টিস্যু, লিগামেন্ট এবং টেন্ডনের আঘাতের ক্ষেত্রে গোমুখাসন এড়িয়ে চলুন।
৪) আপনার পাইলস রক্তপাত হলে গরুর মুখ যোগব্যায়াম করবেন না কারণ এটি সমস্যাটিকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
৫) আপনি যদি স্পন্ডিলাইটিসে ভুগছেন তবে স্ট্র্যাপ বা বেল্টের মতো প্রপস ব্যবহার করে গোমুখাসন সাবধানে করা উচিত, কারণ এটি স্ট্রেচিংয়ের সময় ঘাড়ের অতিরিক্ত চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
শেষ কথা, গোমুখাসন হল প্রসারিত যোগব্যায়ামের অন্যতম সহজ রূপ যা পুরো শরীরকে পুনরুজ্জীবিত করতে এবং শিথিল করতে সাহায্য করে। এটি গভীর পেশী শিথিল করে ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন