গীতা, যা ভগবদ গীতা নামে পরিচিত, হিন্দু ধর্মের এক অন্যতম পবিত্র গ্রন্থ। মহাভারতের অংশ হিসেবে এটি কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের সময় অর্জুন ও শ্রীকৃষ্ণের মধ্যকার সংলাপ নিয়ে রচিত। গীতার মূল শিক্ষা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা প্রদান করে।
কর্মযোগ
গীতার মূল কথাগুলির একটি হল কর্মযোগ, অর্থাৎ কাজের মাধ্যমে মুক্তি। শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে শিক্ষা দেন যে, প্রত্যেক মানুষের নিজের কর্তব্য পালন করা উচিত এবং ফলাফলের চিন্তা না করে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করা উচিত। "কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন" – এই উক্তিটি এই ধারণাকে স্পষ্ট করে তোলে। এটি আমাদের বলে যে আমরা আমাদের কাজের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখি, কিন্তু ফলাফল নিয়ন্ত্রণে আমাদের অধিকার নেই।
ভক্তিযোগ
গীতার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হল ভক্তিযোগ। শ্রীকৃষ্ণ বলেন যে ঈশ্বরের প্রতি নিঃশর্ত ভালোবাসা ও ভক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে মানুষ মুক্তি পেতে পারে। ভক্তি হলো ঈশ্বরের প্রতি সম্পূর্ণ সমর্পণ এবং আস্থা স্থাপন করা। এটি মানসিক শান্তি এবং আধ্যাত্মিক উন্নতির পথ প্রদর্শন করে।
জ্ঞানযোগ
জ্ঞানযোগও গীতার একটি প্রধান বিষয়। শ্রীকৃষ্ণ বলেন যে আত্মজ্ঞান ও পরমাত্মা জ্ঞানের মাধ্যমে মানুষ মুক্তি পেতে পারে। জ্ঞান হল সত্যের পথে চলার প্রাথমিক মাধ্যম। আত্মার প্রকৃতি এবং ঈশ্বরের সঙ্গে আত্মার সম্পর্ক বোঝা এই যোগের মূল কথা।
নিজের কর্তব্য পালন
গীতায় বারবার নিজের কর্তব্য পালনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে শিক্ষা দেন যে, নিজের ধর্ম ও কর্তব্য পালন করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। "স্বধর্মে নিধনং শ্রেয়ঃ পরধর্মো ভয়াবহ" – নিজের ধর্ম পালন করাই শ্রেয়, অন্যের ধর্ম পালন ভয়ঙ্কর। এই উক্তিটি আমাদের বলে যে আমরা আমাদের কর্তব্য পালনে দৃঢ় থাকতে হবে।
মোহ ও মায়ার বন্ধন থেকে মুক্তি
গীতা আমাদের শিক্ষা দেয় কিভাবে মোহ ও মায়ার বন্ধন থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। শ্রীকৃষ্ণ বলেন যে মানুষকে মোহ ও মায়ার বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে সত্যের পথে চলতে হবে। মোহ ও মায়া আমাদের মনকে আচ্ছন্ন করে এবং সত্যকে উপলব্ধি করতে দেয় না।
আত্মসংযম ও মিতাহার
গীতার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল আত্মসংযম ও মিতাহার। শ্রীকৃষ্ণ বলেন যে, নিজেকে সংযত রেখে মিতাহার পালন করতে হবে। এটি আমাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। আত্মসংযম ও মিতাহার মানুষকে আধ্যাত্মিক উন্নতির পথে নিয়ে যায়।
সাম্যবস্থা ও সমদৃষ্টি
গীতা আমাদের শিক্ষা দেয় কিভাবে সাম্যবস্থা ও সমদৃষ্টি অর্জন করতে হয়। শ্রীকৃষ্ণ বলেন যে, সুখ-দুঃখ, লাভ-ক্ষতি, জয়-পরাজয় সবকিছুতে সাম্য দৃষ্টি রাখা উচিত। এটি আমাদের মানসিক স্থিরতা ও শান্তির জন্য অপরিহার্য।
উপসংহার
গীতার মূল কথা হল কর্মযোগ, ভক্তিযোগ, জ্ঞানযোগ, নিজের কর্তব্য পালন, মোহ ও মায়ার বন্ধন থেকে মুক্তি, আত্মসংযম ও মিতাহার এবং সাম্যবস্থা ও সমদৃষ্টি। গীতা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে দিকনির্দেশনা প্রদান করে এবং আধ্যাত্মিক উন্নতির পথে নিয়ে যায়। তাই, গীতার মূল শিক্ষাগুলি আমাদের জীবনে গ্রহণ করা উচিত এবং সেগুলি পালন করা উচিত।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন