জৈন ধর্ম হল এক প্রাচীন ধর্ম যা ভারতের মাটিতে জন্ম নিয়েছে। এই ধর্মের মূল শিক্ষা হলো অহিংসা, সত্য, এবং আত্মসংযম। জৈন ধর্মের অনুসারীরা বিশ্বাস করেন যে মহাবীর তাদের সর্বশেষ তীর্থঙ্কর, যিনি এই ধর্মের প্রধান নীতিগুলো প্রচার করেছেন। জৈন ধর্মের অনুসারীদের জন্য ধর্মগ্রন্থের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে, কারণ এগুলোই তাদের ধর্মীয় নীতিমালা, শিক্ষা, এবং জীবনের দিশা নির্দেশ করে।

জৈন ধর্ম


জৈন ধর্মগ্রন্থের নাম

জৈন ধর্মে প্রধান দুটি শাখা রয়েছে—শ্বেতাম্বর ও দিগম্বর। এই দুটি শাখার অনুসারীরা কিছুটা ভিন্ন গ্রন্থ মেনে চলে। তবে, বেশিরভাগ ধর্মগ্রন্থই উভয় শাখার কাছেই পবিত্র বলে গণ্য হয়।

শ্বেতাম্বরদের মূল ধর্মগ্রন্থকে বলা হয় 'আগম'। এই গ্রন্থটি মহাবীরের উপদেশ এবং তার শিষ্যদের শিক্ষাগুলো ধারণ করে। শ্বেতাম্বর শাখার অনুসারীরা বিশ্বাস করেন যে মহাবীরের মৃত্যুর পরে তার শিষ্যরা এই শিক্ষাগুলো লিপিবদ্ধ করেছিলেন, যা পরবর্তীতে আগম নামে পরিচিত হয়।

দিগম্বরদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ হলো 'পুরাণ'। দিগম্বররা মনে করেন যে মহাবীরের মৃত্যুর পর কয়েকশো বছর পরে আগমের মূল শিক্ষাগুলো হারিয়ে যায়। তাই, তারা মহাবীরের শিক্ষার প্রতিফলন এবং প্রাচীন ঐতিহ্যের ভিত্তিতে নিজেদের ধর্মগ্রন্থ রচনা করেছেন, যা 'পুরাণ' নামে পরিচিত।

এছাড়াও, জৈন ধর্মের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে 'নন্দী সূত্র', 'উত্তরাধ্যয়ন সূত্র', এবং 'কাল্পসূত্র'। এই সবগুলো গ্রন্থ জৈন ধর্মের অনুসারীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং পবিত্র বলে গণ্য করা হয়।

জৈন ধর্মগ্রন্থ কোন ভাষায় রচিত?

জৈন ধর্মগ্রন্থের রচনা নিয়ে বিশেষ কিছু তথ্য উল্লেখযোগ্য। শ্বেতাম্বর শাখার অনুসারীরা মনে করেন যে আগম গ্রন্থগুলোর প্রাথমিক রচনা প্রাকৃত ভাষায় হয়েছিল। প্রাকৃত হল এক প্রাচীন ভারতীয় ভাষা, যা সাধারণ মানুষের ভাষা হিসেবে পরিচিত ছিল। এটি ছিল সহজ এবং সাধারণ মানুষের বোঝার জন্য উপযুক্ত।

আবার, দিগম্বর শাখার ধর্মগ্রন্থগুলোর রচনা সাধারণত সংস্কৃত ভাষায় হয়েছিল। সংস্কৃত হল এক ক্লাসিক্যাল ভাষা যা ভারতীয় সংস্কৃতির ভিত্তি হিসেবে পরিচিত। যদিও প্রাকৃত ভাষায় রচিত গ্রন্থগুলো সহজে বোঝা যেত, সংস্কৃত ভাষায় রচিত গ্রন্থগুলো কিছুটা জটিল ও ব্যাখ্যা সহ ছিল।

পরবর্তীতে, এই ধর্মগ্রন্থগুলো বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছিল, যেমন হিন্দি, গুজরাটি, এবং মারাঠি, যাতে সাধারণ মানুষ এগুলো সহজে পড়তে পারে এবং বুঝতে পারে। বাংলাদেশে যেহেতু বাংলা ভাষা প্রচলিত, তাই জৈন ধর্মের কিছু গ্রন্থ বাংলায়ও অনুবাদ হয়েছে। যদিও বাংলায় অনুবাদ করা গ্রন্থগুলোর সংখ্যা কম, তবে যারা জৈন ধর্ম সম্পর্কে জানার আগ্রহী, তারা সহজেই এই অনুবাদগুলো থেকে সাহায্য নিতে পারেন।

উপসংহার

জৈন ধর্মের গ্রন্থগুলো তাদের ধর্মীয় জীবন এবং নৈতিকতার ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। এগুলো শুধু ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, ইতিহাস এবং সংস্কৃতির দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। জৈন ধর্মের অনুসারীরা তাদের ধর্মগ্রন্থকে শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসের সঙ্গে মেনে চলে এবং প্রতিদিনের জীবনে এগুলোর শিক্ষাগুলো প্রয়োগ করার চেষ্টা করে। প্রাচীন প্রাকৃত এবং সংস্কৃত ভাষায় রচিত এই ধর্মগ্রন্থগুলো আজও মানুষের জীবনের দিশা নির্দেশ করে চলেছে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন