জৈন ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মহাবীর জৈন ধর্মীয় ঐতিহ্যের কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব। তার প্রকৃত নাম ছিল বুদ্ধগয়া, তবে তিনি 'মহাবীর' নামে পরিচিত। জৈন ধর্মের ইতিহাসে মহাবীর একটি বিশেষ স্থান অধিকার করেন, এবং তার জীবন ও শিক্ষা জৈন ধর্মের মূল ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়।

মহাবীর


মহাবীরের জীবন

মহাবীরের জন্ম খ্রিস্টপূর্ব ৫৬০ থেকে ৫০০ সালের মধ্যে, বর্তমান ভারতের বিহার রাজ্যের কপিলাবস্তু গ্রামে হয়েছিল। তার পিতার নাম ছিলেন সেনজয়, এবং মায়ের নাম ছিল ট্রিসালা। মহাবীর একটি রাজকীয় পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং তার জীবনের শুরুতে তিনি একজন রাজকুমার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তবে, একদম তরুণ বয়সে তিনি রাজ্য ও সম্পত্তি ত্যাগ করে আধ্যাত্মিক পথ অনুসরণের সিদ্ধান্ত নেন।

মহাবীরের ত্যাগ ও সাধনা

মহাবীর তার রাজকীয় জীবনের সমস্ত সুখ-সুবিধা ত্যাগ করে কঠোর তপস্যার মাধ্যমে আত্মার মুক্তির পথে হাঁটেন। তিনি দীর্ঘকাল কঠোর উপবাস ও ধ্যান করেন। তার সাধনা ও ধর্মীয় অনুশীলনের মাধ্যমে তিনি মহাজ্ঞান অর্জন করেন এবং সর্বোচ্চ আত্মজ্ঞানের স্তরে পৌঁছান।

মহাবীরের শিক্ষা

মহাবীরের শিক্ষা জৈন ধর্মের মূল নীতিগুলোর ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। তার প্রধান শিক্ষা হলো:

অহিংসা: অহিংসা বা অহিংসার নীতি জৈন ধর্মের মূল স্তম্ভ। মহাবীরের মতে, জীবনের প্রতি দয়া ও সদয় মনোভাব রাখতে হবে, এবং সমস্ত জীবজন্তুর প্রতি সম্মান ও সহানুভূতি প্রদর্শন করতে হবে।

সত্য ও সততা: সত্য ও সততার উপর জোর দিয়ে মহাবীর বিশ্বাস করেন যে, জীবনের মূল উদ্দেশ্য হলো সত্যের অনুসন্ধান করা এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সততা বজায় রাখা।

আত্মসংযম: আত্মসংযম ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জীবনের সমস্ত মোহ ও সংকল্প থেকে মুক্তি পাওয়ার গুরুত্বকেও মহাবীর অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছেন।

অন্যায় ও পরিহার: মহাবীর পরিহার করতে বলেন সমস্ত অন্যায় ও অপকর্ম থেকে, এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সঠিক ও ন্যায়পরায়ণ আচরণের জন্য উদ্বুদ্ধ করেন।

মহাবীরের প্রভাব ও উত্তরাধিকার

মহাবীরের শিক্ষা জৈন ধর্মের শিক্ষা ও প্রথার মূল ভিত্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। তার শিক্ষার মাধ্যমে, জৈন ধর্মের অনুসারীরা একটি নির্দিষ্ট জীবনযাপন পদ্ধতি অনুসরণ করেন যা অহিংসা, সত্য, এবং আত্মসংযমের উপর ভিত্তি করে তৈরি। মহাবীরের শিক্ষা আজও জৈন ধর্মের প্রতি অটুট শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মহাবীরের শিক্ষা ও তার জীবন জৈন ধর্মের ইতিহাস এবং তার অনুশীলনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তার শিক্ষা আজও জৈন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের জন্য অত্যন্ত মূল্যবান এবং তারা তার নীতিগুলো অনুসরণ করে নিজেদের জীবন পরিচালনা করেন।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন