গৌতম বুদ্ধ, যিনি শাক্যমুনি বুদ্ধ নামেও পরিচিত, তার জীবনের প্রথম দিকের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা আজও আলোচিত হয়। গৌতম বুদ্ধের প্রথম গুরুর কথা বললে দুটি নাম উঠে আসে: আচার্য আলারা কালাম এবং ঋষি উদ্দক রামপুত্র। এই দুই জ্ঞানী ছিলেন গৌতম বুদ্ধের প্রথম গুরু, যাদের কাছ থেকে তিনি জ্ঞান অর্জন করেছিলেন এবং নিজেকে সিদ্ধির পথে অগ্রসর করেছিলেন।
আচার্য আলারা কালাম: প্রথম গুরু
গৌতম বুদ্ধ যখন রাজপ্রাসাদ থেকে বেরিয়ে সন্ন্যাসের জীবন গ্রহণ করেন, তখন তিনি আচার্য আলারা কালামের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। আলারা কালাম ছিলেন একজন বিখ্যাত আধ্যাত্মিক শিক্ষক, যিনি রাজস্থান প্রদেশের বৈশালী অঞ্চলে বাস করতেন। তিনি 'ধ্যান' ও 'যোগ' শাস্ত্রের পণ্ডিত হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন।
আলারা কালামের শিক্ষা ছিল "আকিঞ্চন্নায়তন" বা "কিছুই নেই" অবস্থার উপর। এই ধ্যানপদ্ধতিতে মনকে একদম শূন্য অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে জাগতিক সমস্ত ভাবনা ও অনুভূতি বিলীন হয়ে যায়। গৌতম বুদ্ধ আলারা কালামের অধীনে এই ধ্যান শিখেছিলেন এবং অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি এই অবস্থায় পৌঁছে যান।
তবে, আলারা কালামের কাছ থেকে তিনি শিখেছিলেন যে এই অবস্থা আত্মজ্ঞান বা মোক্ষের শেষ পরিসীমা নয়। গৌতম বুঝতে পারেন যে তার আত্মানুসন্ধানের জন্য আরও গভীর ধ্যানের প্রয়োজন।
ঋষি উদ্দক রামপুত্র: দ্বিতীয় গুরু
আলারা কালামের শিষ্যত্ব শেষ করার পর গৌতম বুদ্ধ ঋষি উদ্দক রামপুত্রের কাছে যান। ঋষি উদ্দক রামপুত্র ছিলেন আরেকজন প্রসিদ্ধ আধ্যাত্মিক গুরু, যিনি 'নৈব সঞ্জ্ঞানাসঞ্জ্ঞায়তন' বা "না সজ্ঞা, না অসজ্ঞা" ধ্যানের চর্চা করতেন। এই অবস্থায় মনের সব চিন্তা এবং ধারণা সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হয়, কিন্তু একধরনের সুক্ষ্ম সচেতনতা টিকে থাকে।
গৌতম বুদ্ধ অল্প সময়ের মধ্যেই এই অবস্থায় পৌঁছাতে সক্ষম হন। ঋষি উদ্দক রামপুত্রও তাঁকে নিজের সমকক্ষ বলে মেনে নেন এবং তাঁকে নিজের ধ্যন সম্প্রদায়ের পরবর্তী আচার্য হিসেবে ঘোষণা করার প্রস্তাব দেন। কিন্তু গৌতম বুঝতে পারেন, এই ধ্যানও তাঁকে চূড়ান্ত মুক্তি দিতে পারবে না।
উপলব্ধি ও সিদ্ধান্ত: স্বতন্ত্র সাধনার পথে যাত্রা
গৌতম বুদ্ধের জীবনে আলারা কালাম এবং ঋষি উদ্দক রামপুত্রের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই দুই গুরুর কাছ থেকে তিনি প্রাথমিক ধ্যান এবং যোগ শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু, তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে তাদের শেখানো পথ চূড়ান্ত মুক্তির জন্য যথেষ্ট নয়। তাই, তিনি তাদের পথ ছেড়ে নিজের সাধনার পথে অগ্রসর হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
উপসংহারে, গৌতম বুদ্ধের প্রথম দুটি গুরু তাকে প্রাথমিক ধ্যান এবং আধ্যাত্মিকতার পথে পথ দেখালেও, নিজের অভ্যন্তরীণ অনুসন্ধান এবং সাধনা ছিল তার বুদ্ধত্ব লাভের মূল চাবিকাঠি। আলারা কালাম এবং ঋষি উদ্দক রামপুত্র তাকে বুঝতে সাহায্য করেছিলেন যে চূড়ান্ত মুক্তির জন্য নিজের পথ নিজেকেই খুঁজে নিতে হবে, যা পরবর্তীতে তাকে মহাবোধির দিকে নিয়ে যায়।
এভাবেই, গৌতম বুদ্ধ তার আধ্যাত্মিক যাত্রার প্রথম অধ্যায় শুরু করেন এবং শেষ পর্যন্ত নিজেই নিজের গুরুর আসন গ্রহণ করেন, যা আজও সমগ্র বিশ্বকে প্রেরণা যোগায়।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন