বাংলা হিন্দু ধর্মীয় সংস্কৃতিতে একাদশীর দিনটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। একাদশী হল চাঁদের পূর্ণিমা ও অমাবস্যার একাদশ তিথি, যা ভক্তরা ভগবান বিষ্ণুর প্রতি ভক্তি প্রদর্শনের জন্য পালন করে থাকেন। এই দিনে নিরামিষ আহার এবং নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে উপবাস পালনের প্রথা প্রচলিত। তবে অনেকের মনেই একটি সাধারণ প্রশ্ন থাকে: একাদশীতে কি লবণ খাওয়া যায়?

লবন

একাদশী উপবাসের মূল উদ্দেশ্য হলো শারীরিক ও মানসিক পবিত্রতা বজায় রাখা এবং ভগবান বিষ্ণুর প্রতি একাগ্রতা নিবেদন করা। এই কারণে, একাদশীর উপবাসে কিছু নির্দিষ্ট খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকার নিয়ম রয়েছে। সাধারণত, একাদশীর উপবাসে লবণ গ্রহণ নিষিদ্ধ বলে মনে করা হয়। কারণ লবণকে তামসিক খাদ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা মানসিক স্থিতি এবং ভক্তির পথে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে।

কেন লবণ এড়ানো হয়?

লবণ এড়ানোর পেছনে মূলত দুটি কারণ রয়েছে:

১. আধ্যাত্মিক দিক: হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে, একাদশীতে ভক্তরা নিজেকে ভগবানের সেবায় নিয়োজিত করেন। এই সময়ে তামসিক খাদ্যদ্রব্য যেমন লবণ, রসুন, পেঁয়াজ ইত্যাদি এড়ানো উচিত বলে মনে করা হয়। এটি ভক্তকে সহজে ধ্যানমগ্ন হতে এবং আত্মার শুদ্ধি সাধন করতে সহায়তা করে।

২. স্বাস্থ্যগত দিক: প্রাচীন সময়ে, উপবাসের সময় লবণ গ্রহণ না করার মাধ্যমে দেহের শুদ্ধি এবং বিষাক্ত পদার্থের নিষ্কাশনের প্রচলন ছিল। এটি শারীরিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়ক বলে বিবেচিত হয়।

একাদশীর দিন কী কী খাওয়া যায়?

একাদশীর উপবাসে লবণ ছাড়া নিরামিষ খাদ্য গ্রহণ করা যেতে পারে। যেমন:

  1. ফলমূল: আপেল, কলা, পেঁপে, আঙুর ইত্যাদি।
  2. দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য: দই, মাখন, ঘি ইত্যাদি।
  3. শুকনো ফল: বাদাম, কাজু, কিশমিশ ইত্যাদি।
  4. সাবুদানা: সাবুদানার খিচুড়ি বা পায়েস।
  5. কাঁচা আলু বা অন্যান্য সবজি: লবণ ছাড়া সিদ্ধ বা ভাজা করে খাওয়া যেতে পারে।

ব্যতিক্রম ও স্থানীয় প্রথা

যদিও হিন্দু ধর্মগ্রন্থে একাদশীতে লবণ এড়ানোর কথা বলা হয়েছে, কিন্তু বিভিন্ন অঞ্চলে বা সম্প্রদায়ে এর পালন ভিন্ন হতে পারে। কেউ কেউ লবণ ছাড়া সিন্দুক নামক বিশেষ ধরনের লবণ ব্যবহার করেন, যা একাদশীর নিয়ম অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য।

আরও পড়ুন : একাদশীর আগের দিন কি নিরামিষ খেতে হয়? জানুন সঠিক বিধি-বিধান

উপসংহার

একাদশীর উপবাস পালন একটি আধ্যাত্মিক ও শারীরিক শুদ্ধির প্রক্রিয়া। লবণ খাওয়া এড়িয়ে চলা এই দিনের উপবাসের অন্যতম প্রধান নিয়ম। তবে স্থানীয় প্রথা এবং ব্যক্তিগত বিশ্বাস অনুযায়ী এই নিয়মের কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে। ভক্তি ও নিষ্ঠার সাথে একাদশী পালনের মাধ্যমে ভগবান বিষ্ণুর কৃপা লাভ করা সম্ভব।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন