একাদশী হল সনাতন ধর্মে বিশেষ পবিত্র একটি তিথি। এই তিথিতে উপবাস করা এবং ভক্তিভরে ঈশ্বরের উপাসনা করা ধর্মপ্রাণ হিন্দুদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুশীলন। তবে একাদশী উপবাস সম্পূর্ণ করতে একটি বিশেষ রীতি আছে, যা "পারণ" নামে পরিচিত। পারণ মানে হল নির্ধারিত সময়ে উপবাস ভঙ্গ করা। আর এই পারণের সময় সঠিক মন্ত্র উচ্চারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

একাদশী

একাদশী পারণের গুরুত্ব

একাদশীর উপবাস শুধুমাত্র শারীরিক শুদ্ধির জন্য নয়, এটি মানসিক এবং আত্মিক উন্নতির জন্যও বিশেষভাবে কার্যকর। পারণ করার মাধ্যমে উপবাসের পূর্ণতা আসে। শাস্ত্রে উল্লেখ আছে, যদি নির্ধারিত নিয়ম ও মন্ত্র অনুসারে একাদশীর পারণ না করা হয়, তবে উপবাসের পূর্ণ ফল লাভ হয় না।

একাদশী পারণ মন্ত্র

পারণের সময় ভগবান বিষ্ণুর উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট মন্ত্র পাঠ করার বিধান রয়েছে। এই মন্ত্রটি হল:

"উম নমো ভগবতে বাসুদেবায়।"

এছাড়াও শাস্ত্রে আরও একটি মন্ত্র উল্লেখ রয়েছে, যা পারণের সময় উচ্চারণ করা যেতে পারে:
"পাপোহম পাপকর্মাহম, পাপাত্মা পাপসম্ভবঃ।
ত্রাহি মাম্ কৃষ্ণ শরণাগতং, শরণাগতবৎসল।"

এই মন্ত্রগুলোর মাধ্যমে ভগবান বিষ্ণুকে স্মরণ করে উপবাস ভঙ্গ করা হয়। এটি কেবল আধ্যাত্মিক শক্তি প্রদান করে না, বরং ঈশ্বরের কৃপা লাভেরও একটি উপায়।

একাদশী পারণের সঠিক পদ্ধতি

১. সঠিক সময় নির্বাচন: পারণের সময় সূর্যোদয়ের পরের নির্দিষ্ট মুহূর্তে করতে হবে। শাস্ত্রমতে, দ্বাদশীর মধ্যে পারণ করা আবশ্যক।
২. পবিত্রতা রক্ষা: পারণের আগে অবশ্যই স্নান করে বিশুদ্ধ পোশাক পরিধান করুন।
৩. মন্ত্র পাঠ: নির্ধারিত মন্ত্র উচ্চারণ করে ভগবান বিষ্ণুকে স্মরণ করে পারণ করুন।
৪. পবিত্র খাদ্য গ্রহণ: পারণের জন্য ফল, দুধ, অথবা নিরামিষ খাবার গ্রহণ করা উত্তম।

একাদশী পারণের উপকারিতা

  • শারীরিক ও মানসিক শুদ্ধি অর্জন হয়।
  • ভগবান বিষ্ণুর আশীর্বাদ লাভ হয়।
  • জীবনের পাপ মোচন হয় এবং মুক্তির পথ প্রশস্ত হয়।
  • ভক্তের মধ্যে আধ্যাত্মিক শক্তি ও ধৈর্য বৃদ্ধি পায়।

শেষ কথা

একাদশী পারণ শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় আচার নয়; এটি ভক্তের আত্মিক উন্নতি এবং জীবনের পূর্ণতার পথে এক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। সঠিক মন্ত্র এবং নিয়ম মেনে পারণ করলে ঈশ্বরের কৃপা সহজেই লাভ করা সম্ভব। অতএব, আসুন আমরা প্রত্যেকে একাদশী পারণের গুরুত্ব উপলব্ধি করি এবং সঠিক নিয়ম মেনে এই পবিত্র আচার পালন করি।

আরও পড়ুন : একাদশীর আগের দিন কি নিরামিষ খেতে হয়? জানুন সঠিক বিধি-বিধান

"জয় শ্রী বিষ্ণু।"

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন