একাদশী তিথি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। এই তিথিতে ভগবান বিষ্ণুর পূজা করা হয়, উপবাস রাখা হয় এবং বিভিন্ন ধর্মীয় কার্যক্রম পালন করা হয়। তবে, একাদশী নিয়ে অনেক রকম বিশ্বাস এবং প্রথা প্রচলিত আছে। এর মধ্যে একটি হলো—একাদশীর দিনে চুল কাটা বা নখ কাটা উচিত কি না। আজ আমরা এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

একাদশীতে

একাদশীর গুরুত্ব এবং ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি

হিন্দু শাস্ত্রমতে, একাদশী তিথি হল মোক্ষ লাভের একটি বিশেষ সুযোগ। এই দিনে ভগবান বিষ্ণুর পূজা করা হলে জীবনের পাপক্ষয় হয় এবং পরকালে মুক্তি লাভ হয়। একাদশীর উপবাস পালন করার মূল উদ্দেশ্য হল আত্মশুদ্ধি। ধর্মীয় শাস্ত্রে বলা হয়েছে, একাদশীর দিনে ধ্যান, জপ, পাঠ এবং পূজার মাধ্যমে মনকে একাগ্র করা উচিত।

একাদশী তিথিকে এতটাই পবিত্র মনে করা হয় যে, এই দিনে কোনো ধরনের "অশুদ্ধ" কাজ করতে নিষেধ করা হয়েছে। তাই অনেকেই মনে করেন যে চুল কাটা বা নখ কাটা একাদশীর পবিত্রতাকে ক্ষুণ্ণ করতে পারে।

একাদশীতে চুল কাটার নিষেধাজ্ঞা কেন?

একাদশীতে চুল বা নখ কাটার বিষয়ে বিভিন্ন ব্যাখ্যা প্রচলিত আছে। ধর্মীয় এবং প্রথাগত দৃষ্টিকোণ থেকে এর কারণগুলো হলো:

পবিত্রতার প্রতীক: একাদশী একটি পবিত্র দিন। চুল বা নখ কাটা একটি সাধারণ দৈনন্দিন কাজ। তাই অনেকে মনে করেন, এই ধরনের কাজ একাদশীর পবিত্রতা নষ্ট করে।

শাস্ত্রের বিধান: কিছু শাস্ত্রের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, একাদশীতে শরীর সংক্রান্ত অপ্রয়োজনীয় কাজ, যেমন চুল কাটা, নখ কাটা বা দাড়ি কামানো বর্জন করা উচিত। এটি উপবাসের মূল ভাবনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ—যেখানে দৈহিক বিষয়গুলোর পরিবর্তে আধ্যাত্মিক বিষয়ে মনোনিবেশ করতে বলা হয়েছে।

শ্রদ্ধা এবং ভক্তি: অনেকেই মনে করেন, একাদশী তিথি ভগবানের প্রতি শ্রদ্ধা এবং ভক্তি প্রদর্শনের একটি দিন। এই দিনটি যতটা সম্ভব সরল এবং সাদামাটা ভাবে কাটানো উচিত। চুল বা নখ কাটার মতো কাজ এতে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিশ্বাস এবং বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ

আজকের আধুনিক যুগে, ধর্মীয় বিশ্বাসের পাশাপাশি বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণও গুরুত্বপূর্ণ। একাদশীর দিনে চুল কাটা বা নখ কাটার বিষয়ে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। এটি সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয়।

তবে যারা একাদশীর আচার-অনুষ্ঠান মেনে চলতে চান, তারা স্বেচ্ছায় এই দিনে চুল বা নখ কাটার কাজ থেকে বিরত থাকেন। এতে তাদের ভক্তি ও আস্থা আরও দৃঢ় হয়।

আপনি কি একাদশীতে চুল কাটতে পারেন?

এই প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করে আপনার ব্যক্তিগত বিশ্বাসের উপর। যদি আপনি ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান মেনে চলেন এবং মনে করেন যে একাদশীতে চুল কাটা উচিত নয়, তাহলে এটি এড়িয়ে চলাই ভালো। তবে যদি আপনি আধুনিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি দেখেন এবং এতে কোনো সমস্যা না দেখেন, তাহলে এটি সম্পূর্ণ আপনার ইচ্ছার বিষয়।

উপসংহার

একাদশী তিথি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। চুল কাটা বা নখ কাটার মতো বিষয়গুলোতে বিশ্বাস এবং অভ্যাসের ভিন্নতা থাকতে পারে। এটি একান্তই ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয়। যারা ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে চলতে চান, তারা এই দিনটিকে সম্পূর্ণ ভক্তি ও শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করতে পারেন। আবার যারা আধুনিক জীবনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলেন, তাদের জন্য এটি অতটা গুরুত্বপূর্ণ নাও হতে পারে।

তবে দিনশেষে, ধর্ম বা বিশ্বাসের চেয়ে বড় বিষয় হল মনের পবিত্রতা এবং ভালো কাজ করা। তাই আপনি যেভাবে একাদশী পালন করতে চান, সেটাই আপনার জন্য সঠিক।

আরও পড়ুনঃ হিন্দুরা কেন পুজোর সময় ঘন্টা বাজায়? ধর্মীয় এবং বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন