গীতা, যা আমরা সাধারণত ভগবদ্ গীতা নামে জানি, একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাচীন ভারতীয় ধর্মগ্রন্থ। এটি মহাভারত মহাকাব্যের অন্তর্গত এবং কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এবং অর্জুনের মধ্যে হওয়া কথোপকথনের আকারে রচিত। ভগবদ্ গীতা কেবল একটি ধর্মীয় গ্রন্থ নয়; এটি নৈতিকতা, দর্শন এবং মানব জীবনের গভীর তত্ত্ব বোঝার একটি অমূল্য উৎস। আসুন এই গ্রন্থের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক আলোচনা করি।

গীতা

গীতার উৎপত্তি ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

গীতা মহাভারতের একটি অংশ, যা মহর্ষি বেদব্যাস দ্বারা রচিত। এটি মোট ১৮টি অধ্যায় এবং ৭০০ শ্লোকে বিভক্ত। এই কথোপকথন শুরু হয় যখন অর্জুন যুদ্ধক্ষেত্রে তাঁর আত্মীয়স্বজন, গুরু এবং প্রিয়জনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে পারেন না। তখন শ্রীকৃষ্ণ তাঁকে ধর্ম, কর্তব্য এবং জীবনের প্রকৃত অর্থ নিয়ে শিক্ষা দেন।

গীতার মূল দর্শন

গীতার মূল দর্শন "কর্মযোগ" বা কাজের গুরুত্বকে কেন্দ্র করে। শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেন যে জীবনের মূলমন্ত্র হলো নিজের কর্তব্য পালন করা, তবে তার ফলাফলের প্রতি আকাঙ্ক্ষা না রাখা। এটি "নিষ্কাম কর্ম" নামেও পরিচিত। গীতায় আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ দর্শন আলোচনা করা হয়েছে:

জ্ঞানযোগ: জ্ঞানের মাধ্যমে আত্মার প্রকৃতি এবং বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে বোঝার পথ।

ভক্তিযোগ: ভগবানের প্রতি পূর্ণ ভক্তি ও বিশ্বাস স্থাপন করা।

জীবনের সমস্যা সমাধানে গীতার ভূমিকা

গীতা জীবনের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের দিকনির্দেশনা দেয়। এটি আমাদের শেখায় যে মানসিক শান্তি অর্জনের জন্য আমাদের চিত্তের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখা এবং দুঃখ-সুখকে সমানভাবে গ্রহণ করা প্রয়োজন। শ্রীকৃষ্ণ বলেন, "যে ব্যক্তি সুখে এবং দুঃখে সমান থাকে, সে প্রকৃত যোগী।"

আধুনিক জীবনে গীতার প্রাসঙ্গিকতা

গীতার শিক্ষা শুধুমাত্র প্রাচীন যুগেই সীমাবদ্ধ নয়; এটি আধুনিক জীবনেও সমান প্রাসঙ্গিক। বর্তমানের দ্রুতগতির জীবনে, যেখানে মানুষ প্রায়শই মানসিক চাপ এবং অস্থিরতায় ভোগে, গীতার শিক্ষা একজন মানুষকে তার মানসিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে।

গীতার বৈশ্বিক গ্রহণযোগ্যতা

গীতার শিক্ষা শুধু ভারতীয় সংস্কৃতিতে নয়, বিশ্বজুড়েই জনপ্রিয়। মহাত্মা গান্ধী থেকে শুরু করে আলবার্ট আইনস্টাইন পর্যন্ত বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি গীতার শিক্ষা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছেন। আজকের দিনেও বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং কর্মজীবনের ক্ষেত্রে গীতার নীতিগুলো অনুশীলন করা হয়।

উপসংহার

গীতা একধরনের সার্বজনীন জ্ঞানের উৎস, যা মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক। এটি শুধু ধর্মীয় গ্রন্থ নয়; এটি মানবতার জন্য একটি গাইড। এর প্রতিটি শ্লোক জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিককে তুলে ধরে, যা আমাদের আত্মার গভীরতায় প্রবেশ করতে এবং প্রকৃত সত্য উপলব্ধি করতে সাহায্য করে। সুতরাং, গীতার শিক্ষা গ্রহণ করে আমরা নিজেদের জীবনকে আরও অর্থবহ করে তুলতে পারি।

আরও পড়ুন : গীতা কি বেদের অংশ? বেদ ও ভগবত গীতার মধ্যে পার্থক্য কি?

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন