রামায়ণ আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশের এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মহাকাব্য। এই মহাকাব্য শুধু রামচন্দ্রের গল্প নয়, এতে তাঁর ভাইদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। রাম, লক্ষ্মণ, ভরত এবং শত্রুঘ্ন চার ভাইয়ের জীবন, তাঁদের আদর্শ, এবং তাঁদের স্ত্রীদের নিয়ে অনেক গল্প প্রচলিত আছে। আজকের এই লেখায় আমরা জানবো তাঁদের স্ত্রীর নাম এবং তাঁদের জীবনের কিছু দিক।

রামায়ণ

রামের স্ত্রী: সীতা

রামচন্দ্রের স্ত্রী সীতাকে আমরা সবাই চিনি। সীতা ছিলেন মিথিলার রাজা জনকের কন্যা। একটি স্বর্ণমৃগকে কেন্দ্র করে রামের বনবাসের সময় সীতাকে রাবণ অপহরণ করেন। এরপর রাম তাঁকে উদ্ধার করতে লঙ্কা অভিযান করেন। সীতা ছিলেন ধৈর্য, সহমর্মিতা এবং নারীত্বের এক অনন্য প্রতীক। তাঁর চরিত্র থেকে আমরা শক্তি এবং ন্যায়ের পথ অনুসরণের শিক্ষা পাই।

লক্ষ্মণের স্ত্রী: উর্মিলা

লক্ষ্মণের স্ত্রী ছিলেন উর্মিলা, যিনি মিথিলার রাজা জনকের ছোট মেয়ে এবং সীতার বোন। রামের সঙ্গে লক্ষ্মণ বনবাসে গিয়েছিলেন, কিন্তু উর্মিলা অযোধ্যাতেই থেকে যান। উর্মিলার চরিত্রে ত্যাগ এবং ধৈর্যের প্রতিফলন দেখা যায়। ১৪ বছরের দীর্ঘ সময় তিনি লক্ষ্মণের জন্য অপেক্ষা করেছিলেন এবং একা থেকেও সংসারের দায়িত্ব সামলেছিলেন।

ভরতের স্ত্রী: মাণ্ডবী

ভরত ছিলেন কৌশল্যার ছোট ছেলে এবং তাঁর স্ত্রী ছিলেন মাণ্ডবী। মাণ্ডবী ছিলেন জনকের ভাই কুশধ্বজের কন্যা। ভরত যখন রামের অনুপস্থিতিতে অযোধ্যার রাজা হয়েছিলেন, তখন মাণ্ডবী তাঁকে সর্বদা সহযোগিতা করেছেন। তাঁদের সম্পর্ক ছিল সমর্থন এবং সম্মানের প্রতীক।

শত্রুঘ্নের স্ত্রী: শ্রুতকীর্তি

শত্রুঘ্ন ছিলেন রামের সবচেয়ে ছোট ভাই এবং তাঁর স্ত্রী ছিলেন শ্রুতকীর্তি। শ্রুতকীর্তিও ছিলেন কুশধ্বজের কন্যা এবং মাণ্ডবীর বোন। শত্রুঘ্ন যখন মথুরার রাজা হন, তখন শ্রুতকীর্তি ছিলেন তাঁর পাশে। তাঁদের জীবন ছিল শান্তিপূর্ণ এবং সুখী দাম্পত্যের উদাহরণ।

চার ভাইয়ের দাম্পত্য জীবন থেকে শিক্ষা

রাম, লক্ষ্মণ, ভরত এবং শত্রুঘ্ন তাঁদের দাম্পত্য জীবনে যে ভালোবাসা, ত্যাগ এবং সম্মান দেখিয়েছেন, তা আমাদের জীবনের জন্য অনুপ্রেরণা। তাঁদের স্ত্রীরা তাঁদের সঙ্গ দিয়েছেন প্রতিটি মুহূর্তে, যেকোনো কঠিন পরিস্থিতিতেও। তাঁরা শুধু পত্নী নয়, ছিলেন তাঁদের স্বামীদের জীবনের এক অপরিহার্য অংশ।

এই মহাকাব্য আমাদের শেখায়, সম্পর্কের মূল ভিত্তি হলো ভালোবাসা, বিশ্বাস এবং পারস্পরিক সম্মান। তাদের জীবন থেকে আমরা বুঝতে পারি যে দায়িত্ব এবং কর্তব্য পালনই জীবনের সঠিক পথ।

উপসংহার

রামায়ণের এই মহৎ চরিত্ররা আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক। তাঁদের জীবন কেবল গল্প নয়, এটি আমাদের আদর্শ এবং ন্যায়ের পথে চলার অনুপ্রেরণা। রাম, লক্ষ্মণ, ভরত এবং শত্রুঘ্নের স্ত্রীরা তাঁদের জীবনের মধ্য দিয়ে যে বার্তা দিয়েছেন, তা চিরকাল আমাদের মনে অনুরণিত হয়ে থাকবে।

আরও পড়ুনঃ ভরত ও শত্রুঘ্ন কার অবতার ছিলেন? রামায়ণের ব্যাখ্যা

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন