একাদশী ব্রত হিন্দু ধর্মের একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ উপবাস। এটি ভগবান বিষ্ণুর প্রতি উৎসর্গীকৃত একটি পবিত্র দিন। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, একাদশী ব্রতের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি, পাপমোচন এবং ভগবানের আশীর্বাদ লাভ করা যায়।
তবে একাদশীর ব্রত শুধুমাত্র সেই দিনই নয়, তার আগের দিনও বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ একাদশীর আগের দিন সঠিক নিয়মে আহার গ্রহণ করলে একাদশীর উপবাস আরও সফল এবং ফলপ্রসূ হয়।
একাদশীর আগের দিনের খাদ্যাভ্যাসের গুরুত্ব
একাদশীর আগের দিনকে 'দশমী তিথি' বলা হয়। এই দিনে শুদ্ধ এবং নিরামিষ খাবার গ্রহণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এর কারণ হল, একাদশীর দিনে শরীর এবং মনকে পবিত্র ও স্বচ্ছ রাখতে হবে। যদি আগের দিন ভারী বা অশুদ্ধ খাবার গ্রহণ করা হয়, তাহলে একাদশীর উপবাসের সুফল কমে যেতে পারে।
দশমীর দিন কী কী খাবার গ্রহণ করা উচিত?
১. নিরামিষ খাবার: মাংস, মাছ, পেঁয়াজ এবং রসুন পরিহার করতে হবে। এগুলোকে তামসিক আহার বলা হয়, যা মন এবং শরীরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
২. শাকসবজি: তাজা শাকসবজি যেমন ফুলকপি, লাউ, পটল, মিষ্টিকুমড়া, করলা খাওয়া যেতে পারে। তবে কচু বা কোনো বিষাক্ত শাক এড়িয়ে চলতে হবে।
৩. দুধ এবং দুধজাতীয় খাবার: ঘি, মাখন, পনির ইত্যাদি দুধজাতীয় খাবার গ্রহণ করা যেতে পারে।
৪. ফলমূল: কলা, আপেল, কমলা, পেয়ারা ইত্যাদি ফলমূল খাওয়া যেতে পারে। এগুলো শরীরে পুষ্টি জোগায় এবং একাদশীর উপবাসে সহায়তা করে।
৫. সাধারণ শস্য: ভাতের পরিবর্তে লাল চাল বা আটা থেকে তৈরি রুটি খাওয়া যেতে পারে। তবে বেশি তেল-মশলা পরিহার করতে হবে।
দশমীর দিনে কী কী খাবার এড়িয়ে চলতে হবে?
১. মাংস ও মাছ ২. পেঁয়াজ এবং রসুন ৩. ডাল (বিশেষত মাসকলাই ডাল) ৪. অতিরিক্ত তেল ও মশলাযুক্ত খাবার ৫. কোনো প্রকার নেশাজাতীয় দ্রব্য
একাদশীর ব্রতের সঠিক প্রস্তুতি
একাদশীর আগের দিন নির্দিষ্ট সময়ে আহার গ্রহণ করা উচিত। সাধারণত, সূর্যাস্তের আগে খাবার শেষ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এতে পেট পরিষ্কার থাকে এবং উপবাসের সময় শরীরে কোনো অস্বস্তি হয় না।
দশমী তিথির আধ্যাত্মিক দিক
দশমী তিথি শুধুমাত্র খাদ্যাভ্যাসের জন্য নয়, এটি আধ্যাত্মিক প্রস্তুতিরও একটি অংশ। এই দিনে বেশি সময় ভগবানের নামজপ, প্রার্থনা এবং ধর্মগ্রন্থ পাঠ করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
উপসংহার
একাদশীর আগের দিন সঠিক নিয়মে নিরামিষ খাদ্য গ্রহণ করলে একাদশীর ব্রত পালন আরও সফল হয়। এই দিন পবিত্র মন এবং শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে খাদ্যাভ্যাসে সংযম রাখা অত্যন্ত জরুরি। শুদ্ধ, নিরামিষ এবং সহজপাচ্য খাবার গ্রহণ করে আমরা শারীরিক এবং মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে পারি ভগবান বিষ্ণুর আশীর্বাদ লাভের জন্য।
আসুন, আমরা সবাই দশমী তিথির পবিত্রতা বজায় রেখে একাদশীর ব্রত পালন করি এবং ভগবানের কৃপা লাভ করি।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন