হিন্দু ধর্মের দেবতাদের মধ্যে শিব অন্যতম প্রধান এবং শ্রদ্ধেয় দেবতা। তিনি মহাদেব, নীলকণ্ঠ, শম্ভু এবং রুদ্র নামেও পরিচিত। শিবের পিতা-মাতার পরিচয় নিয়ে পুরাণে বিভিন্ন মত পাওয়া যায়, যা হিন্দু ধর্মের গভীর তত্ত্ব ও কাহিনীর অংশ।
শিবের পিতা: ব্রহ্মা না বিষ্ণু?
পুরাণে শিবের জন্ম নিয়ে কিছু ভিন্ন মত পাওয়া যায়। শিবের পিতার বিষয়ে কোনো সরাসরি বর্ণনা নেই, তবে অনেকেই মনে করেন যে শিব স্বয়ংভূ। অর্থাৎ, তিনি নিজেই নিজের সৃষ্টিকর্তা। এর মানে, তিনি কোনো নির্দিষ্ট পিতা বা মাতা দ্বারা জন্মগ্রহণ করেননি।
তবে কিছু পুরাণে উল্লেখ আছে যে শিব ব্রহ্মার তৃতীয় নয়নের তেজ থেকে উদ্ভূত হয়েছিলেন। আবার অন্য কাহিনীতে দেখা যায়, তিনি বিষ্ণুর কণ্ঠ থেকে প্রাকটিত হয়েছেন। এই কাহিনীগুলি প্রতীকী অর্থ বহন করে, যা ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং শিবের মধ্যে ত্রিদেবের সমন্বয় প্রকাশ করে।
শিবের মাতা: প্রকৃতির রূপ
শিবের মাতা সম্পর্কে কোনো নির্দিষ্ট বর্ণনা নেই। অনেকেই মনে করেন, দেবী আদ্যাশক্তি বা মহাশক্তিই শিবের মাতা। পুরাণে মহাশক্তিকে প্রকৃতি বা মহামায়ার রূপে বর্ণনা করা হয়েছে, যা সমস্ত সৃষ্টির মূল।
কিছু কাহিনীতে বলা হয়েছে যে শিব কৌশিকী শক্তি থেকে উদ্ভূত হয়েছিলেন, যা দেবী দুর্গার এক রূপ। এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখা যায়, শিব এবং শক্তি একে অপরের পরিপূরক।
শিবের জন্ম কাহিনী
শিব পুরাণে শিবকে অনাদি এবং অনন্ত বলা হয়েছে। তিনি সময়, স্থান এবং সৃষ্টির ঊর্ধ্বে। তাই শিবের জন্ম বা সৃষ্টির বিষয়ে যে কাহিনী পাওয়া যায়, তা মূলত প্রতীকী।
একটি কাহিনীতে উল্লেখ আছে, যখন বিশ্ব ব্রহ্মার সৃষ্টি থেকে বিকশিত হচ্ছিল, তখন তমোগুণের প্রতীক রূপে শিবের আবির্ভাব ঘটে। তার তেজ এতই প্রবল ছিল যে ব্রহ্মা এবং বিষ্ণু দুজনেই তাকে স্নান করিয়ে প্রশমিত করেন। এর ফলে শিবের রূপে মহাশক্তি স্থিতিশীল হয়।
শিব ও ত্রিদেবের সমন্বয়
শিব, ব্রহ্মা এবং বিষ্ণু হলেন ত্রিদেব, যাঁরা সৃষ্টির তিনটি মূল প্রক্রিয়ার প্রতীক: সৃষ্টি, পালন এবং সংহার। এই তিন দেবতার সমন্বয়ই হিন্দু ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। শিব হলেন সংহারের প্রতীক, যা জীবনের শেষ অধ্যায় নির্দেশ করে এবং নতুন সৃষ্টির জন্য জায়গা তৈরি করে।
পুরাণের বার্তা
পুরাণে শিবের পিতা-মাতার বিষয়ে যে মতভেদ পাওয়া যায়, তা থেকে বোঝা যায় যে শিব কোনো নির্দিষ্ট সত্ত্বার সঙ্গে আবদ্ধ নন। তিনি সর্বজনীন, সর্বশক্তিমান এবং স্বয়ংভূ। তাঁর পিতা-মাতা সম্পর্কে কাহিনীগুলি মূলত দার্শনিক এবং প্রতীকী ব্যাখ্যা প্রদান করে।
আরও পড়ুন : লোকনাথ বাবার প্রণাম মন্ত্র: জীবনের শান্তি ও কৃপার বার্তা
উপসংহার
শিবের পিতা-মাতার পরিচয় নিয়ে পুরাণে বিভিন্ন মত থাকলেও, তাঁর আধ্যাত্মিক ও প্রতীকী গুরুত্বই প্রধান। শিব শুধুমাত্র একজন দেবতা নন; তিনি সময়, শক্তি এবং ধ্যানের এক প্রতীক। তাই, শিবের পিতা-মাতার প্রশ্নটি আসলে জীবনের গভীর দার্শনিক তত্ত্বের সঙ্গে যুক্ত, যা আমাদের আত্ম-অনুসন্ধানের পথ দেখায়।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন