ওমান বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় শ্রমবাজার। প্রতি বছর হাজার হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক ওমানে কাজের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায়। তবে বিগত কিছু সময় ধরে ওমান সরকার বেশ কিছু ক্যাটাগরির ভিসা স্থগিত রেখেছে, যা বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Oman

২০২৫ সালে ওমানের ভিসা পুনরায় চালু হবে কি না এবং যদি হয়, তবে কবে নাগাদ তা সম্ভব হতে পারে—এ নিয়ে অনেকেই জানতে চান। এই ব্লগে আমরা ওমানের ভিসা কবে খুলবে সংক্রান্ত সর্বশেষ তথ্য, ভিসা বন্ধের কারণ, বর্তমান পরিস্থিতি এবং সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

ওমানের ভিসা স্থগিতের কারণ

ওমান সরকার ২০২৩-২০২৪ সালে বেশ কিছু ক্যাটাগরির শ্রমিক ভিসা (ওয়ার্ক পারমিট) স্থগিত করেছিল। মূলত অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক ও সামাজিক কিছু কারণে তারা এই সিদ্ধান্ত নেয়। চলুন বিস্তারিতভাবে দেখে নিই, কেন ওমানের ভিসা বন্ধ রাখা হয়েছিল:

১. অভ্যন্তরীণ শ্রমবাজার নিয়ন্ত্রণ

ওমান সরকার দেশটির নিজস্ব নাগরিকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে চায়। প্রবাসীদের উচ্চ সংখ্যার কারণে স্থানীয় কর্মীদের জন্য চাকরির সুযোগ কমে আসছে। ফলে সরকার ওমানি নাগরিকদের কর্মসংস্থান বাড়াতে প্রবাসী কর্মী নেওয়ার হার সীমিত করেছে।

২. অর্থনৈতিক মন্দা ও সরকারি নীতি পরিবর্তন

বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব ওমানেও পড়েছে। এ কারণে দেশটি তাদের বাজেট ও অভিবাসন নীতিতে পরিবর্তন এনেছে, যার ফলে কিছু ক্যাটাগরির ভিসা সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয়েছিল।

৩. অবৈধ অভিবাসন ও নিয়ন্ত্রণহীন প্রবাহ

অনেক বিদেশি কর্মী অবৈধভাবে কাজ করছে, যা দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও শ্রম আইন লঙ্ঘনের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে ওমান সরকার ভিসা ব্যবস্থাপনায় কঠোর নিয়ন্ত্রণ এনেছে।

৪. নতুন শ্রম আইন ও কোটাপদ্ধতি

ওমান সরকার নতুন শ্রম আইন কার্যকর করেছে, যেখানে কিছু নির্দিষ্ট খাতে কেবল ওমানি নাগরিকদের নিয়োগের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ফলে বিদেশি কর্মীদের জন্য নতুন ভিসা ইস্যু কমে গেছে।

বর্তমান পরিস্থিতি ২০২৫ পর্যন্ত

২০২৫ সালের শুরুর দিকে ওমানের ভিসা নীতিতে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে, বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য নতুন কিছু সুযোগ তৈরি হতে পারে। নিচে ওমানের বর্তমান ভিসা পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো:

১. ভিসা স্থগিত থাকলেও আলোচনার অগ্রগতি

বাংলাদেশ ও ওমান সরকারের মধ্যে কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার প্রবাসী কর্মীদের স্বার্থ রক্ষা করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং নতুন ভিসা চালুর বিষয়ে ওমান সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছে।

২. বিশেষ ক্যাটাগরির ভিসা চালুর সম্ভাবনা

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে যে, ২০২৫ সালের মাঝামাঝি কিছু নির্দিষ্ট খাতের জন্য ভিসা পুনরায় চালু হতে পারে। বিশেষ করে নির্মাণ, কৃষি, এবং পরিষেবা খাতের জন্য নতুন ওয়ার্ক পারমিট দেওয়া হতে পারে।

৩. ওমানি কোম্পানির চাহিদা অনুযায়ী ভিসা প্রদান

বর্তমানে, ওমান সরকার শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কিছু কোম্পানির চাহিদার ভিত্তিতে ভিসা দিচ্ছে। তাই, যাদের চাকরির অফার রয়েছে, তাদের জন্য নতুন ভিসা পেতে কিছুটা সুবিধা হতে পারে।

ভবিষ্যৎ পূর্বাভাস: কবে খুলতে পারে ওমানের ভিসা?

ওমানে কাজ করতে আগ্রহী অনেক বাংলাদেশি বর্তমানে ভিসা চালুর অপেক্ষায় রয়েছেন। বিগত কয়েক বছর ধরে ওমান সরকার নানা কারণে ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। ফলে অনেক কর্মীর পক্ষে নতুন ভিসা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে সাম্প্রতিক কিছু ইতিবাচক পরিবর্তনের কারণে ২০২৫ সালে ওমানের ভিসা আবার চালু হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে, যেসব খাতে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা রয়েছে, সেসব খাতের জন্য ভিসা খোলার সম্ভাবনা বেশি।

বর্তমানে ওমান সরকার তার অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি এবং শ্রমবাজারকে পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে। দেশের নাগরিকদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করাই তাদের প্রধান লক্ষ্য। তবে বিভিন্ন খাতে এখনও পর্যাপ্ত ওমানি কর্মী নেই, বিশেষ করে নির্মাণ, কৃষি, ও পরিষেবা খাতে। ফলে এই খাতগুলোর জন্য বিদেশি কর্মীদের নেওয়ার প্রয়োজন পড়তে পারে। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, ২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে কিছু ক্যাটাগরির জন্য নতুন ভিসা চালু হতে পারে।

বাংলাদেশ সরকার ওমানের সঙ্গে শ্রমবাজার সম্পর্কিত বিভিন্ন আলোচনায় অংশ নিচ্ছে। সরকার প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ওমান সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে, যাতে বাংলাদেশি কর্মীরা নতুনভাবে ওমানে যাওয়ার সুযোগ পান। এরই মধ্যে কিছু ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে, যা আশা জাগাচ্ছে যে খুব শিগগিরই ওমানের ভিসা চালু হতে পারে।

বিশ্ব অর্থনীতির পরিবর্তনের সঙ্গেও ওমানের ভিসা নীতির সম্পর্ক রয়েছে। বর্তমানে অনেক দেশ শ্রমিক সংকটে ভুগছে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে দক্ষ ও অদক্ষ কর্মীদের চাহিদা বেড়েছে। ওমানও এই তালিকায় রয়েছে। যদিও তারা বর্তমানে ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি অবলম্বন করছে, তবে শ্রমিক চাহিদার কারণে ধীরে ধীরে নতুন কর্মী নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। বিশেষ করে জুন-জুলাই ২০২৫ নাগাদ নতুন ভিসা চালুর সম্ভাবনা রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে ভিসা চালুর বিষয়টি নির্ভর করছে বিভিন্ন শর্তের ওপর। প্রথমত, ওমান সরকার যদি তাদের শ্রমনীতি শিথিল করে এবং বিদেশি কর্মীদের জন্য নতুন কোটাপদ্ধতি চালু করে, তাহলে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের জন্য ওয়ার্ক পারমিট পুনরায় চালু হবে। দ্বিতীয়ত, যেসব কোম্পানি ওমানে কর্মী নিয়োগ করতে চায়, তারা যদি সরকারের অনুমতি পায়, তাহলে নতুন ভিসার সুযোগ আরও দ্রুত তৈরি হবে।

ওমানে যেতে ইচ্ছুক প্রবাসীদের উচিত সর্বশেষ আপডেটের জন্য নিয়মিতভাবে ওমান দূতাবাস ও বাংলাদেশ সরকারের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসরণ করা। অনেক সময় অসাধু এজেন্ট ও দালালরা ভুয়া ভিসার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার চেষ্টা করে, তাই এসব ফাঁদে পা না দেওয়াই ভালো।

সব মিলিয়ে, ২০২৫ সালে ওমানের ভিসা চালুর বিষয়ে বেশ কিছু ইতিবাচক ইঙ্গিত রয়েছে। যদিও এখনো কোনো নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা হয়নি, তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় ধরে নেওয়া যায় যে ২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে কিছু নির্দিষ্ট ক্যাটাগরির ভিসা পুনরায় চালু হতে পারে। যারা ওমানে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন, তাদের উচিত ধৈর্য ধরে সরকারি আপডেটের অপেক্ষা করা এবং বৈধ উপায়ে ওমানের কর্মসংস্থানের সুযোগ খোঁজা।

উপসংহার

ওমানের ভিসা পুনরায় চালুর বিষয়ে আলোচনা চলছে, তবে এখনো নিশ্চিত তারিখ ঘোষণা করা হয়নি। ২০২৫ সালের মাঝামাঝি কিছু ক্যাটাগরির ভিসা চালুর সম্ভাবনা রয়েছে, বিশেষত নির্মাণ ও পরিষেবা খাতে। যারা ওমানে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন, তারা যেন সতর্কতার সঙ্গে সরকারি তথ্য অনুসরণ করেন এবং প্রতারণার শিকার না হন।

আরও পড়ুন : সার্বিয়া ১ ইউরো বাংলাদেশের কত টাকা? আপডেট তথ্য

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন