হিন্দু ধর্মে মৃত্যুর পর দেহ দাহ করার প্রচলন প্রাচীনকাল থেকেই রয়েছে। এটি শুধুমাত্র ধর্মীয় রীতি নয়, এর পেছনে রয়েছে গভীর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা। আধুনিক বিজ্ঞানও এই প্রথার যৌক্তিকতা স্বীকার করে। চলুন জেনে নেওয়া যাক, কেন হিন্দুরা মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলে এবং এর বৈজ্ঞানিক দিকসমূহ।
১. দেহের দ্রুত বিলীন নিশ্চিত করা
মানুষের দেহ মূলত কার্বন, অক্সিজেন, হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন ও অন্যান্য উপাদানে গঠিত। মৃত্যুর পর দেহ পচতে শুরু করে এবং ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে নানা রোগ ছড়াতে পারে। মৃতদেহ দাহ করলে শরীর দ্রুত কার্বনে পরিণত হয় এবং ব্যাকটেরিয়ার বংশবৃদ্ধি রোধ হয়। ফলে রোগের সংক্রমণ কমে যায়।
২. পরিবেশগত সুবিধা
মৃতদেহ কবর দিলে তা ধীরে ধীরে মাটির সাথে মিশে যায়, কিন্তু এতে জমির প্রয়োজন হয়। শহর ও গ্রামে কবরের জন্য পর্যাপ্ত স্থান পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। অন্যদিকে, দাহ করলে জমির প্রয়োজন হয় না এবং পরিবেশের ভারসাম্যও ঠিক থাকে।
৩. জলদূষণ প্রতিরোধ
মৃতদেহ মাটিতে পুঁতে রাখলে বৃষ্টি বা ভূগর্ভস্থ পানির সাথে ক্ষতিকর জীবাণু ও রাসায়নিক পদার্থ মিশে যেতে পারে। এতে জলদূষণের আশঙ্কা থাকে। দাহ করলে এই সমস্যা হয় না, কারণ উচ্চ তাপমাত্রায় জীবাণু সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়।
৪. আত্মার মুক্তি ও শক্তির রূপান্তর
হিন্দু দর্শনে বিশ্বাস করা হয়, শরীর পঞ্চতত্ত্ব (পৃথিবী, জল, অগ্নি, বায়ু, আকাশ) থেকে সৃষ্টি, তাই মৃত্যুর পর দেহকে এই উপাদানগুলোর মাঝে ফিরিয়ে দেওয়া উচিত। দাহ করার ফলে দেহ দ্রুত এই উপাদানগুলোর সাথে মিশে যায়, যা আত্মার মুক্তিকে তরান্বিত করে বলে বিশ্বাস করা হয়।
৫. মনস্তাত্ত্বিক দিক
দাহ প্রথার মাধ্যমে পরিবার ও প্রিয়জনেরা দ্রুত মৃত্যুর বাস্তবতা মেনে নিতে পারেন। কবরস্থানে দেহ অনেকদিন অক্ষত থাকার ফলে পরিবার দীর্ঘদিন শোক কাটাতে পারে না। কিন্তু দাহের মাধ্যমে দ্রুত এ শোক কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়।
৬. কার্বন নিঃসরণ ও আধুনিক সমাধান
অনেকে বলে থাকেন, দাহ করলে কার্বন নিঃসরণ হয়, যা পরিবেশের ক্ষতি করতে পারে। তবে বর্তমানে বিদ্যুত্-চালিত বা ইকো-ফ্রেন্ডলি চুল্লির ব্যবহার শুরু হয়েছে, যা পরিবেশবান্ধব এবং অধিক কার্যকর।
উপসংহার
হিন্দুদের মৃতদেহ দাহ করার প্রথা শুধুমাত্র ধর্মীয় বিশ্বাস নয়, এটি বৈজ্ঞানিকভাবেও যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত। এর ফলে রোগ-সংক্রমণ কমে, পরিবেশ সুরক্ষিত থাকে এবং আত্মার মুক্তির বিশ্বাসও পূরণ হয়। আধুনিক যুগেও এই প্রথার বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা ও সুবিধাগুলো মানুষকে আরও বেশি গ্রহণযোগ্য করে তুলছে।
আরও পড়ুনঃ হিন্দুরা কেন পুজোর সময় ঘন্টা বাজায়? ধর্মীয় এবং বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন