নিউটনের গতিসূত্র বিজ্ঞানের এক অনন্য আবিষ্কার। এই তিনটি সূত্র পদার্থবিজ্ঞানের ভিত্তি গঠন করে। আজ আমরা নিউটনের প্রথম সূত্র নিয়ে আলোচনা করব, যা "জড়তার সূত্র" নামেও পরিচিত।
নিউটনের প্রথম সূত্র কী বলে?
নিউটনের প্রথম সূত্র অনুযায়ী:
"কোন বস্তু স্থির থাকলে তা স্থিরই থাকবে, আর যদি কোনো বস্তু গতিশীল থাকে, তবে তা একই বেগে ও একই পথে চলতে থাকবে, যদি না বাহ্যিক কোনো বল তার ওপর ক্রিয়া করে।"
অর্থাৎ, কোনো বস্তু তার অবস্থান পরিবর্তন করবে না যদি না বাহ্যিক কোনো শক্তি তাকে বাধ্য করে। এটাই হল "জড়তা" বা Inertia।
জড়তা কী?
জড়তা হল বস্তুগুলোর সেই স্বাভাবিক প্রবণতা, যার ফলে তারা তাদের বর্তমান অবস্থানে থাকতে চায়। অর্থাৎ, যদি কোনো বস্তু স্থির থাকে, তবে তা নিজে থেকে চলতে শুরু করবে না। একইভাবে, যদি কোনো বস্তু চলমান থাকে, তবে তা নিজে থেকে থামবে না।
নিউটনের প্রথম সূত্রের বাস্তব উদাহরণ
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নিউটনের প্রথম সূত্রের অনেক উদাহরণ দেখতে পাই। নিচে কিছু সাধারণ উদাহরণ দেওয়া হলো:
১. চলন্ত বাস ও যাত্রীর আচরণ
যখন বাস হঠাৎ ব্রেক করে, তখন যাত্রীরা সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে। কারণ, বাস চলমান অবস্থায় ছিল, তাই যাত্রীর শরীরও একই গতিতে এগিয়ে যাচ্ছিল। ব্রেক করার ফলে বাস থেমে যায়, কিন্তু যাত্রীর শরীর তার আগের গতির কারণে সামনে চলে যেতে চায়।
২. টেবিলের উপর রাখা বই
একটি বই যদি টেবিলের উপর স্থির থাকে, তাহলে এটি নিজে থেকে মাটিতে পড়বে না। কারণ, এটি বাহ্যিক কোনো বল দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে না।
৩. গাড়ি চালু ও বন্ধ করার সময় অনুভূতি
গাড়ি যখন দ্রুত চালু হয়, তখন পেছনের দিকে ধাক্কা লাগে। আবার, গাড়ি হঠাৎ থামালে সামনের দিকে ঝাঁকুনি লাগে। এটি জড়তার কারণে ঘটে।
৪. ধাক্কা না দিলে ফুটবল নড়বে না
একটি ফুটবল মাঠে পড়ে থাকলে এটি নিজে থেকে গড়াবে না। কিন্তু যখন আমরা এটি লাথি মারি, তখন এটি গতিশীল হয়। অর্থাৎ, বাহ্যিক বল প্রয়োগ না করা পর্যন্ত বস্তু স্থির থাকে।
নিউটনের প্রথম সূত্রের বাস্তব জীবনে গুরুত্ব
নিউটনের প্রথম সূত্র শুধু বিজ্ঞান বইয়ের তত্ত্ব নয়, এটি বাস্তব জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- গাড়ি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা: গাড়িতে সিটবেল্ট ব্যবহার করা হয় কারণ ব্রেক করলে যাত্রীরা সামনে ধাক্কা খেতে পারে। সিটবেল্ট যাত্রীদের ধরে রাখে, যা দুর্ঘটনা কমাতে সাহায্য করে।
- স্পোর্টস ও ফিজিক্স: ক্রীড়াবিদরা তাদের শরীরের জড়তা বুঝে খেলার কৌশল ঠিক করে। যেমন, ফুটবল খেলোয়াড় বলের গতি ও দিক পরিবর্তনের জন্য বাহ্যিক বল ব্যবহার করে।
- মহাকাশ ভ্রমণ: মহাকাশযান যখন মহাশূন্যে প্রবেশ করে, তখন এটি বাহ্যিক কোনো বাধা না থাকায় একবার চালু হলে নিজেই গতিশীল থাকে। এটি নিউটনের প্রথম সূত্রের সরাসরি প্রয়োগ।
নিউটনের প্রথম সূত্রের গণিত সমীকরণ
যদিও নিউটনের প্রথম সূত্র কোনো নির্দিষ্ট গণিত সমীকরণে প্রকাশিত হয় না, তবে এটি নিউটনের দ্বিতীয় সূত্রের সাথে সম্পর্কিত। নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র অনুযায়ী:
যেখানে,
Fযদি কোনো বস্তু স্থির থাকে বা অভিন্ন বেগে চলে, তাহলে বাহ্যিক বল F = 0 হবে। অর্থাৎ, বস্তুটি তখন তার স্থিতি বজায় রাখবে।
উপসংহার
নিউটনের প্রথম সূত্র আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে কেন বস্তু স্থির থাকে বা চলতে থাকে। এটি বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনেক কিছুর ব্যাখ্যা দেয়।
এই সূত্রের সাহায্যে আমরা গাড়ির নিরাপত্তা ব্যবস্থা, খেলাধুলা, মহাকাশ বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাস্তবসম্মত ব্যাখ্যা পাই। তাই নিউটনের প্রথম সূত্র শুধু পদার্থবিজ্ঞান নয়, বরং আমাদের বাস্তব জীবনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আরও পড়ুন : নিউটনের গতিসূত্র: নিউটনের ২য় সূত্র ব্যাখ্যা ও বাস্তব উদাহরণ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন