নিউটনের গতি সম্পর্কিত তিনটি সূত্রের মধ্যে দ্বিতীয় সূত্রটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং বিজ্ঞান ও প্রকৌশলে এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। এই সূত্রটি বল, ভর এবং ত্বরণের মধ্যে সম্পর্ক নির্ধারণ করে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বহু ঘটনা এই সূত্রের ওপর ভিত্তি করে ব্যাখ্যা করা যায়।
নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র কী বলে?
নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র অনুসারে, কোনো বস্তুর উপর বল প্রয়োগ করলে সেটির গতি পরিবর্তিত হয়, এবং এই পরিবর্তন তার ভরের উপর নির্ভর করে। সূত্রটি সাধারণত এই রূপে লেখা হয়:
এখানে,
F = বল (Newton বা N এককে পরিমাপ করা হয়),
m = বস্তুটির ভর (কিলোগ্রামে পরিমাপ করা হয়),
a = ত্বরণ (m/s² এককে পরিমাপ করা হয়)।
এই সূত্র অনুসারে, একটি বস্তুর উপর বেশি বল প্রয়োগ করা হলে তার ত্বরণ বেশি হবে, আবার যদি একই বল একটি ভারী বস্তুতে প্রয়োগ করা হয়, তাহলে তার ত্বরণ কম হবে।
সূত্রটি কীভাবে কাজ করে?
নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র বাস্তবে কীভাবে কাজ করে তা বোঝার জন্য কিছু সাধারণ উদাহরণ দেখা যাক—
১. ফুটবল কিক করার উদাহরণ
যদি আপনি একটি ফুটবলকে আলতো করে লাথি মারেন, তাহলে বলটি ধীরে গড়াতে শুরু করবে। কিন্তু যদি আপনি জোরে লাথি মারেন, তাহলে বলটি দ্রুত ছুটে যাবে। এর কারণ হলো বেশি বল প্রয়োগ করা হলে বেশি ত্বরণ তৈরি হয়, যা বলটিকে দ্রুত গতিতে পাঠায়।
২. ট্রাক বনাম সাইকেল
একটি ট্রাক ও একটি সাইকেলকে একই পরিমাণ বল দিলে সাইকেল সহজেই চলতে শুরু করবে, কিন্তু ট্রাক খুব ধীরে চলতে শুরু করবে। কারণ ট্রাকের ভর অনেক বেশি, ফলে একই পরিমাণ বল প্রয়োগ করলে তার ত্বরণ কম হবে।
৩. গাড়ির ব্রেকিং সিস্টেম
যখন গাড়ির ব্রেক করা হয়, তখন গাড়ির গতি কমে যায়। যদি গাড়িটি ভারী হয়, তাহলে এটি থামাতে বেশি বল (ব্রেকের চাপ) প্রয়োজন হবে।
নিউটনের দ্বিতীয় সূত্রের ব্যবহার
এই সূত্রের বাস্তব প্রয়োগ অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়—
- গাড়ি, মোটরসাইকেল এবং বিমান নির্মাণে – ইঞ্জিনের শক্তি ও কার্যক্ষমতা নির্ধারণে এই সূত্র ব্যবহৃত হয়।
- রকেট সায়েন্সে – রকেট উৎক্ষেপণের সময় জ্বালানি পোড়ানোর ফলে নির্গত গ্যাসের বল কত হবে তা হিসাব করতে এই সূত্র ব্যবহৃত হয়।
- ক্রিকেট ও ফুটবলে – ব্যাটসম্যান যখন শক্তি দিয়ে বল মারেন, তখন বলের ত্বরণ বেশি হয়।
গণিতের সাহায্যে নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র
ধরা যাক, একটি ৫ কেজি ভরের বস্তুতে ১০ নিউটন বল প্রয়োগ করা হলো। তাহলে বস্তুটির ত্বরণ কত হবে?
সূত্র অনুযায়ী,
অর্থাৎ, বস্তুটি প্রতি সেকেন্ডে ২ মিটার গতিবেগ অর্জন করবে।
উপসংহার
নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এবং বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গাড়ি চালানো, খেলাধুলা, মহাকাশ গবেষণা থেকে শুরু করে প্রায় সবক্ষেত্রে এই সূত্র কাজ করে। সুতরাং, এই সূত্রটি বোঝা ও এর প্রয়োগ জানা অত্যন্ত দরকারি।
এই সহজ ব্যাখ্যার মাধ্যমে আশা করি নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র সম্পর্কে আপনার স্পষ্ট ধারণা হয়েছে।
আরও পড়ুন : নিউটনের গতিসূত্র: নিউটনের ১ম সূত্র ব্যাখ্যা ও বাস্তব উদাহরণ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন