হিন্দু ধর্ম বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন ধর্ম, যার মূল ভিত্তি হল বেদ। বেদের শিক্ষা হিন্দু দর্শনের ভিত্তি গঠন করেছে, তবে বাস্তব জীবনে অধিকাংশ হিন্দু বেদ পড়ার পরিবর্তে গীতা পাঠ করতে বেশি আগ্রহী। কেন এমনটা হয়? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে আমাদের বেদ ও গীতার পার্থক্য এবং তাদের গুরুত্ব বুঝতে হবে।
বেদ: হিন্দুধর্মের মৌলিক গ্রন্থ
বেদ হিন্দুধর্মের সবচেয়ে প্রাচীন ও পবিত্র ধর্মগ্রন্থ। এটি চার ভাগে বিভক্ত – ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ, সামবেদ এবং অথর্ববেদ। বেদ মূলত মন্ত্র, স্তোত্র, উপাসনা ও যজ্ঞসংক্রান্ত বিধান নিয়ে গঠিত। এগুলো অনেকটাই জটিল এবং সংস্কৃত ভাষায় লেখা হওয়ার কারণে সাধারণ মানুষের বোঝার পক্ষে কঠিন।
বেদের পাঠ ও ব্যাখ্যার দায়িত্ব ছিল মূলত ব্রাহ্মণদের ওপর। তারা যজ্ঞ ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য বেদ ব্যবহার করতেন। সাধারণ মানুষ বেদ পড়ার সুযোগ খুব কম পেত এবং তার অর্থ বোঝার ক্ষমতাও ছিল সীমিত।
গীতা: সহজবোধ্য এবং ব্যবহারিক জীবনদর্শন
গীতা বা ‘শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা’ হল মহাভারতের একটি অংশ, যা মূলত কৃষ্ণ ও অর্জুনের কথোপকথন। এটি সংস্কৃত ভাষায় লেখা হলেও অনেক সহজ ও হৃদয়গ্রাহী। গীতার মূল শিক্ষা হল ধর্ম, কর্ম ও মোক্ষের পথ। এখানে যজ্ঞ বা কঠোর আচার-বিধির কথা না বলে আত্মোপলব্ধি, কর্মযোগ, ভক্তিযোগ এবং জ্ঞানযোগের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
গীতা সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সমস্যা ও তার সমাধানের পথ দেখায়। ধর্ম কীভাবে পালন করা উচিত, সঠিক ও ভুলের মধ্যে পার্থক্য কী, কিভাবে কর্ম করা উচিত— এসব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর গীতায় পাওয়া যায়।
গীতা জনপ্রিয় হওয়ার কারণ
১. সহজ ভাষা ও সরল ব্যাখ্যা – বেদের তুলনায় গীতা সহজবোধ্য, যার ফলে সাধারণ মানুষ এটি সহজেই পড়তে ও বুঝতে পারে।
2. ব্যবহারিক দিক – গীতায় মানুষের জীবনের প্রতিটি দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। কর্মের প্রতি নিষ্ঠা, আত্ম-উন্নয়ন ও মানবজীবনের লক্ষ্য সম্পর্কে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে।
৩. আধ্যাত্মিক দিক – গীতায় জীবনের গভীরতর অর্থ খোঁজার কথা বলা হয়েছে, যা ধর্ম ও দর্শনের এক সুন্দর সমন্বয়।
৪. উপদেশমূলক শিক্ষায় ভরপুর – গীতায় শুধু ধর্মীয় নয়, নৈতিক শিক্ষাও রয়েছে, যা সব ধর্মের মানুষ গ্রহণ করতে পারে।
৫. শ্রীকৃষ্ণের ভূমিকা – হিন্দু ধর্মে শ্রীকৃষ্ণকে ঈশ্বরের অবতার হিসেবে মানা হয়, তাই তাঁর উপদেশ মানুষ বেশি গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করে।
উপসংহার
যদিও বেদ হিন্দু ধর্মের মূল ভিত্তি, গীতা সাধারণ মানুষের কাছে বেশি জনপ্রিয় হয়েছে এর সহজবোধ্যতা ও জীবনের সমস্যার বাস্তবসম্মত সমাধান দেওয়ার কারণে। গীতা ধর্মীয় দর্শনের পাশাপাশি একজন মানুষের নৈতিক ও আত্মিক উন্নতির পথ দেখায়, যা একে সকল শ্রেণির মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। তাই আজও কোটি কোটি মানুষ বেদ নয়, গীতা পড়ে এবং তার শিক্ষাগুলো জীবনে প্রয়োগ করার চেষ্টা করে।
আরও পড়ুনঃ গীতা কি বেদের অংশ? বেদ ও ভগবত গীতার মধ্যে পার্থক্য কি?
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন