হিন্দু ধর্ম পৃথিবীর প্রাচীনতম ধর্মগুলোর মধ্যে অন্যতম এবং এটি একটি নির্দিষ্ট ব্যক্তি দ্বারা প্রতিষ্ঠিত নয়। বরং, এটি সহস্রাব্দ ধরে বিকাশ লাভ করা একটি ধর্ম ও জীবনদর্শন। এই ধর্মের কোনো নির্দিষ্ট প্রবর্তক নেই, বরং বিভিন্ন ঋষি-মুনি, দার্শনিক এবং আচার্যগণের মাধ্যমে এটি গড়ে উঠেছে।
হিন্দু ধর্মের উৎপত্তি
হিন্দু ধর্মের শিকড় বহু প্রাচীন সভ্যতার সঙ্গে জড়িত। ইতিহাসবিদদের মতে, হিন্দু ধর্মের মূল ভিত্তি হলো বৈদিক সংস্কৃতি, যা খ্রিস্টপূর্ব অন্তত ১৫০০ থেকে ২০০০ বছর আগের। এই সময়ের মধ্যেই বৈদিক গ্রন্থসমূহ, যেমন- ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ, সামবেদ ও অথর্ববেদ রচিত হয়েছিল। এগুলোর মাধ্যমে হিন্দু ধর্মের মৌলিক ধারণাগুলো বিকশিত হয়।
ঋষি-মুনিদের ভূমিকা
হিন্দু ধর্মের বিকাশে ঋষি-মুনিদের ভূমিকা অপরিসীম। ঋগ্বেদ থেকে শুরু করে উপনিষদ ও অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ রচনা এবং প্রচারের মাধ্যমে তাঁরা হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন দিককে পরিস্ফুট করেছেন। ঋষিরা ছিলেন মেধাবী দার্শনিক, যাঁরা ধ্যান ও সাধনার মাধ্যমে সত্য অনুসন্ধান করতেন। তাদের মধ্যে ঋষি ব্যাস, ঋষি মনু, ঋষি বিশ্বামিত্র, ঋষি কণাদ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
শ্রীকৃষ্ণ, রাম ও অন্যান্য অবতারদের ভূমিকা
হিন্দু ধর্মে বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন অবতারদের আবির্ভাব ঘটেছে, যারা ধর্মের প্রচার ও পুনঃপ্রতিষ্ঠার দায়িত্ব নিয়েছেন। শ্রীকৃষ্ণ, শ্রীরাম, গৌতম বুদ্ধ, মহাবীর, আদিশঙ্করাচার্য প্রমুখ ব্যক্তিত্ব হিন্দু ধর্মের ভাবধারাকে শক্তিশালী করেছেন এবং প্রচার করেছেন। শ্রীকৃষ্ণ তাঁর বাণীর মাধ্যমে (বিশেষ করে শ্রীমদ্ভগবদগীতায়) ধর্মের মৌলিক দিকগুলো তুলে ধরেছেন।
উপসংহার
সারসংক্ষেপে বলা যায়, হিন্দু ধর্মের কোনো নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠাতা নেই। এটি একটি চিরন্তন ধর্ম ও জীবনদর্শন, যা প্রাকৃতিক নিয়ম, বৈদিক জ্ঞান ও আধ্যাত্মিক দর্শনের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে। হাজার হাজার বছর ধরে ঋষি, মুনি, দার্শনিক ও আচার্যদের প্রচেষ্টায় এই ধর্মের বিকাশ ঘটেছে এবং আজও এটি তার ঐতিহ্য বজায় রেখে চলেছে।
আরও পড়ুনঃ হিন্দুরা হাতে লাল সুতা বাধে কেন? রহস্য ও ধর্মীয় গুরুত্ব
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন