নিউটনের গতির তিনটি সূত্রের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বাস্তব জীবনে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় তার তৃতীয় সূত্র। এই সূত্রটি আমাদের চারপাশের প্রতিটি কর্ম ও প্রতিক্রিয়ার সম্পর্ক বোঝাতে সাহায্য করে। আজ আমরা সহজ ভাষায় নিউটনের তৃতীয় সূত্র সম্পর্কে জানব এবং বাস্তব জীবনের কিছু উদাহরণ দেখব।
নিউটনের তৃতীয় সূত্র কী?
নিউটনের তৃতীয় সূত্র বলছে:
"প্রত্যেক ক্রিয়ার বিপরীতে সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া থাকে।"
এর মানে হলো, যখনই কোনো বস্তু অন্য কোনো বস্তুর ওপর বল প্রয়োগ করে, তখন সেই দ্বিতীয় বস্তুটি প্রথম বস্তুর ওপর একই পরিমাণ বল, কিন্তু বিপরীত দিক থেকে প্রয়োগ করে। সহজভাবে বললে, আপনি যদি কারও দিকে হাত দিয়ে ধাক্কা দেন, তবে সেই ব্যক্তি একই শক্তিতে আপনাকে ধাক্কা দেবে, যদিও আপনি সেটি সরাসরি অনুভব নাও করতে পারেন।
সূত্রের গাণিতিক রূপ
নিউটনের তৃতীয় সূত্রকে গাণিতিকভাবে প্রকাশ করা যায়:
F1 = -F2
এখানে,
- F1 হলো প্রথম বস্তুর দ্বারা প্রয়োগ করা বল,
- F2 হলো দ্বিতীয় বস্তুর দ্বারা প্রয়োগ করা প্রতিক্রিয়ামূলক বল।
দুইটি বলের মান সমান হলেও, তাদের দিক বিপরীত হয়।
বাস্তব জীবনে নিউটনের তৃতীয় সূত্রের উদাহরণ
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে যেখানে নিউটনের তৃতীয় সূত্র কাজ করে। চলুন কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ দেখি:
১. হাঁটা বা দৌড়ানো
যখন আমরা হাঁটি, তখন আমাদের পা মাটির ওপর চাপ দেয় এবং পিছনের দিকে ধাক্কা দেয়। একই সময়ে, মাটি আমাদের পায়ের ওপর একটি বিপরীত শক্তি প্রয়োগ করে, যা আমাদের সামনের দিকে ঠেলে দেয়।
২. রকেট বা রকেট ইঞ্জিন
রকেট থেকে যখন গরম গ্যাস নিচের দিকে বেরিয়ে যায়, তখন সেই গ্যাস রকেটকে বিপরীত দিকে ঠেলে দেয়, ফলে রকেট উপরের দিকে উঠে যায়।
৩. সাঁতার কাটা
যখন কেউ পানিতে সাঁতার কাটে, তখন সে হাত ও পা দিয়ে পানিকে পিছনের দিকে ঠেলে দেয়। পানিও বিপরীত দিকে ঠেলে দেয়, ফলে মানুষ সামনের দিকে অগ্রসর হয়।
৪. বন্দুক বা কামান থেকে গুলি ছোড়া
যখন বন্দুক থেকে গুলি বের হয়, তখন গুলিটি সামনের দিকে এগিয়ে যায় এবং বন্দুকটিকে পিছনের দিকে ঠেলে দেয় (যা আমরা রিকয়েল হিসেবে জানি)।
৫. টেবিলের ওপর বই রাখা
যদি একটি বইকে টেবিলের ওপর রাখা হয়, তবে বইটি তার ওজন অনুযায়ী টেবিলের ওপর বল প্রয়োগ করে। একই সময়ে, টেবিলও বইটির ওপর সমান পরিমাণে বিপরীতমুখী বল প্রয়োগ করে, ফলে বইটি টেবিলের ওপর স্থির থাকে।
নিউটনের তৃতীয় সূত্রের গুরুত্ব
নিউটনের তৃতীয় সূত্র কেবল বিজ্ঞান নয়, আমাদের বাস্তব জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি প্রকৌশল, মহাকাশ গবেষণা, পরিবহন ব্যবস্থা, ক্রীড়া, চিকিৎসা ইত্যাদিতে প্রভাব ফেলে। উদাহরণস্বরূপ, গাড়ির ব্রেক সিস্টেম, প্লেনের উড্ডয়ন, ফুটবল খেলা, বা মেডিকেল প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ।
উপসংহার
নিউটনের তৃতীয় সূত্র আমাদের প্রকৃতির মৌলিক নিয়মগুলোর একটি, যা প্রতিটি ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়ার মধ্যে সম্পর্ক বোঝায়। আমরা আমাদের চারপাশে এই সূত্রের অসংখ্য উদাহরণ দেখতে পাই। হাঁটা, দৌড়ানো, সাঁতার কাটা, গাড়ি চালানো – সব কিছুতেই এই সূত্র কাজ করে। বিজ্ঞানকে সহজভাবে বোঝার জন্য নিউটনের এই সূত্র অত্যন্ত কার্যকর। আশা করি, এই ব্যাখ্যাটি আপনাদের জন্য সহজ ও বোধগম্য হয়েছে।
আরও পড়ুন : নিউটনের গতিসূত্র: নিউটনের ১ম সূত্র ব্যাখ্যা ও বাস্তব উদাহরণ
আরও পড়ুন : নিউটনের গতিসূত্র: নিউটনের ২য় সূত্র ব্যাখ্যা ও বাস্তব উদাহরণ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন